• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন |
  • English Version
ব্রেকিং নিউজ :
ইসলামপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্দ্বীতায় এড.আঃ সালাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত বকশীগঞ্জে র‍্যাবের অভিযানে ২৪ কেজি গাঁজাসহ আটক-৩ জামালপুরে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা জামালপুরে তীব্র দাবদাহে দোস্ত এইড বাংলাদেশ সোসাইটির খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ জামালপুরে ১৫ টি ইউনিয়নে সার্বজনীন পেনশন স্কিমের বুথের উদ্বোধন দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র কাদের সেখ বরখাস্ত বিএসইসি চেয়ারম্যানকে সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেডের ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন দেওয়ানগঞ্জে সিডস কর্মসূচির অবহিতকরণ সভা জামালপুরে এইডস রোগী ২৮ জন কর্মশালায় প্রকাশ মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বকশগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক এমদাদ

জামালপুরে ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই জাল সনদে প্রধান শিক্ষকের ৬ বছর

শওকত জামান :

ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই ৬ বছর ধরে জাল সনদে নির্বিঘে প্রধান শিক্ষকের পদে রয়েছেন জামালপুরের মেলান্দহের খাশিমারা পুটিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মুখলেছুর রহমান। টাকা আত্মসাৎ, বিভিন্ন পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি গ্রহণ ও বিদ্যালয়ের আয়ব্যয় হিসাবে গড়মিল নিয়েও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২৬ জানুয়ারি খাশিমারা পুটিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মো. মুখলেছুর রহমান। ১৯৯৭ সালে তিনি ময়মনসিংহের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত প্রশিক্ষণার্থী মো. মুখলেছুর রহমান ৪৬২৯ নং রোলে ও ১০৪৯১০ নং রেজিস্ট্রেশনে বিএড পরীক্ষায় অংশ নিলেও ১৯৯৭ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকাশিত টেবুলেশন শিটে স্থগিত দেখানো হয়েছে তার ফলাফল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হবার লোভে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে ২০০৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরে জাল সনদ তৈরি করেন তিনি। জাল সাময়িক সনদে প্রধান শিক্ষকের আবেদন করে ২০১৫ সালে জাল মূল সনদ জমা দেন। ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে জাল সনদ দিয়েই তিনি দখল করে নেন প্রধান শিক্ষকের চেয়ার। ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৫ জুন তারিখে তৎকালীন মেলান্দহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোজাম্মেল হক অধিকতর যাচাইয়ের জন্য উমাশিআ/মেলা/জামাল/২০১৫/১১৬ নং স্মারকে ময়মনসিংহের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষের কাছে মতামত জানতে চান। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীন ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একই স্মারকে বলেন, ১৯৯৭ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে মো. মুখলেছুর রহমানের ফলাফল স্থগিত দেখানো হয়েছে। স্থগিতকৃত ফলাফল সংক্রান্ত অন্য কোনো তথ্যই অফিসে রেকর্ড না থাকায় এ ব্যাপারে অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন তিনি। এই স্মারকে তিনি প্রয়োজনীয় কার্যার্থে অনুলিপিও দেন জামালপুর জেলা শিক্ষা অফিসার ও ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর।

২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মেলান্দহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম এলাহী আখন্দ উমাশিআ/মেলা/জামাল/২০১৯-২৪৭ নং স্মারকে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্টারের কাছে বিএড সনদ যাচাইয়ের জন্য এক পত্র পাঠান। পত্রে উল্লেখ করেন, খাশিমারা পুটিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুখলেছুর রহমানের ব্যাচেলর অব এডুকেশন সনদ সঠিক নয় মর্মে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। সনদপত্রটি সঠিক কিনা যাচাই করা প্রয়োজন।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি তারিখে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম নাছির উদ্দিন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে বিষয়টি জানতে চান। এখনও স্থগিতকৃত ফলাফলের বিষয়টি অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। অথচ প্রধান শিক্ষক মো. মুখলেছুর রহমান জাতীয় বিশ^বিদ্যায় থেকে মার্কশিট ও মূল সনদ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ নিয়ে ওই প্রধান শিক্ষকের জাল সনদের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ২৮ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যরা।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে কথা হয় স্কুলের প¦ার্শবর্তী শাহীন বাজারে কথা হয় সাবেক ইউপি জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে । তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক মুখলেছুর রহমান বিএড পরীক্ষায় পাস না করেই ম্যনেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন। অনিয়ম দূর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষা বিভাগ থেকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি। এসম আশপাশ থেকে স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা জড়ো হয়ে অনিয়ম দূর্নীতি ও ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

স্কুল প্রাঙ্গনে দেখা হয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সেলিম উদ্দিনের সাথে। তিনি প্রধান শিক্ষক প্রসঙ্গে বলেন,  বিদ্যালয়ের  আয় ব্যায়ের হিসাব রাখেন না। ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের শুরুতেই সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মনগড়া হিসাব তৈরী করে রেজুলেশন খাতায় লিপিবদ্ধ করেন। প্রধান শিক্ষক সরকারী দলের নেতা হওয়ায় প্রতিবাদ করলে হামলা মামলাসহ নানা হুমকি দেন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি ১৯৯৭ সালে মুখলেছুর রহমান ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড কোর্সে ভর্তি হয়। ১০ মাস ট্রেনিংয়ের পর বিএড ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয় মুখলেছুর রহমান। বিএড ফলাফলে তার রেজাল্ট স্থগিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী রেজাল্ট বের হওয়ার দুইমাসের মধ্যে সংশোধন করে নিতে হয়। তা না করে উনি ২০০৫ সালে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন, শুনেছিলাম ঢাকার নীলক্ষেত থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে এনেছেন। ১৯৯৭ সালে যারা বিএড পাস করেছে তাদের সার্টিফিকেটের সাথে মুখলেছুর রহমানের সার্টিফিকেটের মিল নেই। এই অভিযোগ ৬ বছর ধরে চলছে। তদন্তে মাধ্যমে এই অভিযোগের সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।

প্রধান শিক্ষক মো. মুখলেছুর রহমানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়েও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যদের স্বাক্ষরিত অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার সরকার নির্ধারিত ফি উপেক্ষা করে ৬হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন তিনি। জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক মো. মুখলেছুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৬ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের আয়ব্যয় হিসাব চাইলে তিনি কালক্ষেপণ করেন। এ নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু হিসাব গ্রহণের জন্য ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি অর্থ উপকমিটি ও বিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি নিরীক্ষক কমিটি গঠন করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়ের টাকা প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার সিদ্ধান্ত হলেও ব্যাংকে জমা না দিয়ে ১লাখ ১৯হাজার ২শ ৩৯টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেন। ২০১৬ সালের হিসাব ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারিতে অর্থ উপকমিটির কাছে দেওয়া হলে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এছাড়া ২০১৭, ১৮ ও ১৯ অর্থবছরের হিসাব চাইতে গেলে হিসাব না দিয়ে উল্টো ওই কমিটির সদস্যদের গালিগালাজ করে চাকিচ্যূত করার হুমকি দেন তিনি।

জাল সনদ ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মুখলেছুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি  জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়, আমাকে হেয় করার জন্য সংবাদিকদের সামনে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেছে।

এ প্রসঙ্গে মেলান্দহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম এলাহি আখন্দ বলেন, প্রধান শিক্ষক মুখলেছুর রহমানের নামে র্দীঘদিন ধরেই স্থগিত সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি, অনিয়ম, দূনীতি ও স্কুল অব্যবস্থাপনার লিখিত অভিযোগ আসছে। অভিযোগ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে পাঠিয়েছে। আমার তদন্ত করে প্রমান সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেতা হবে বলে এই শিক্ষা কর্মকর্তা আশ্বাস দেন।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।